মাসিকের কতদিন পর সহবাস করলে বাচ্চা হয় ?
আজকে আলোচনা করবো কখন সহবাস করলে সন্তান ধরনের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। প্রতি মাসে মেয়েদের সাদা স্রাবের ৪ রকমের অবস্থা দেখা দেয়। প্রথম প্রকারের অবস্থায় সহবাস করলে সন্তান ধারণের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ থাকে। তার পরের দুই ধরনের অবস্থায় সন্তান ধারণের সম্ভাবনা একটু করে বাড়তে থাকে। চতুর্থ ধরনে একধরনের সাদা স্রাব আসে যেটা দেখা দেওয়ার সময় সহবাস করলে সন্তান ধারণের সম্ভাবনা থাকে সব চেয়ে বেশি। মাসিকের কতদিন পর সহবাস করলে বাচ্চা হয় এই প্রশ্নের উত্তর নিম্নের আলোচনায় আশা করি আপনার বুঝতে সহজ হবে!
প্রথম অবস্থা হচ্ছে মাসিকের ঠিক পরে যখন কোন সাদা স্রাব যায় না। মাসিকের রাস্তাটা খুব শুকনো শুকনো মনে হয়। তখন সন্তান ধারণের সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। ঠিক ০.৩%।
এর পরের অবস্থায় মাসিকের রাস্তা হালকা ভেজা মনে হয়। কিন্তু আপনি চোখে কোন সাদা স্রাব দেখেন না বা হাতেও ধরতে পারেন না। তখন সন্তান ধারণের সম্ভাবনা থাকে ১% এর একটু বেশি। ১.৩% । প্রথম এই দুই অবস্থা সবার মধ্যে দেখা যায় না। বিশেষ করে যাদের মাসিকের সাইকেল ছোট। তাদের ক্ষেত্রে এই দুই অবস্থা মাসিকের সময়ই হয়ে যেতে পারে। ৩য় ও ৪র্থ অবস্থা যেটা বলবো সেটা প্রায় সবার ক্ষেত্রেই দেখা যায়। তৃতীয় অবস্থায় ঘন সাদা যায়। সেটা আঙুলের সাথে আঠালো হয়ে লেগে থাকে। তখন সন্তান ধারণের সম্ভাবনা ২.৫% কাছে চলে আসে। চতুর্থ অবস্থায় সাদা স্রাব পাতলা এবং পিচ্ছিল হয়।
কাচা ডিমের সাদা অংশ যেমন মসৃণ আর পিচ্ছিল হয় ঠিক তেমন। দেখতে স্বচ্ছ। আর সেই সাদা স্রাব টেনে দুই আঙ্গুল দিয়ে বড় করা যায়। কয়েক ইঞ্চি বড় করলেও ভাঙে না। তখন গর্ভধারণের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। ২৮.৬% অর্থাৎ, প্রায় ৩০% এর কাছাকাছি চলে আসে। এই চতুর্থ অবস্থা শেষ হওয়ার পর আবার সাদা স্রাব ঘন আঠালো বা নাই হয়ে যায়। মাসিকের আগে আগে আবার পাতলা স্রাব যেতে পারে কিছু কিছু নারীর ক্ষেত্রে, তবে সেটা গর্ভধারণের সাথে সম্পর্কিত নয়। তাহলে করণীয় কি? তৃতীয় অবস্থা যখন শুরু হবে তখন থেকেই চেষ্টা শুরু করবেন এবং চতুর্থ অবস্থা যেদিন শেষ হবে তার পরের তিনদিন পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। আর একটু আগেই দেখেছেন চতুর্থ অবস্থায় সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে এটা মাথায় রাখবেন।
এই গেল প্রথম পদ্ধতি। আরও কয়েকটা সহজ উপায় এখন জানা যাক। কারণ সবার শরীর তো এক ভাবে কাজ করে না। নানা কারণে সাদা স্রাব ভিন্ন হতে পারে। কয়েকটি পদ্ধতি বুঝে নেন। তাহলে একটা না একটা আপনার সঠিক সময় বুঝতে সাহায্য করবে।
দ্বিতীয় পদ্ধতিতে চলে যাই। এটা হলো শরীরের তাপমাত্রা মাপা। মাসের সময় আর মাসিকের শেষে শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকে। যখন ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু বের হয় অর্থাৎ ডিমটা ফোটে তখন একজন নারীর শরীরের তাপমাত্রা খানিকটা বেড়ে যায়। না মাপলে এটা সাধারণত বোঝা যায় না। কারণ খুব সামান্য পরিমাণে বাড়ে। ০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর মতো। আপনি যদি প্রতিদিন শরীরের তাপমাত্রা মাপতে থাকেন তাহলে কখন বেড়ে গেলো সেটা আপনি ধরতে পারবেন।
এক্ষেত্রে একটা রুল মনে রাখবেন । ছয়ের পরেই তিন। টানা ৬ দিন তাপমাত্রা কম থাকার পর টানা ৩ দিন বেশি তাপমাত্রা থাকতে হবে। একদিন তাপমাত্রা এসে সেটা আবার চলে গেলে হবে না। কারণ সেটা মানসিক চাপ বা অন্য কোন কারণে হতে পারে। এই যে টানা বেশি তাপমাত্রা শুরু হলো এটা শুরু হওয়ার ৩য় দিন পর্যন্ত ফার্টাইল উইন্ডো (fertile window) থাকে। এই বেশি তাপমাত্রা যতদিনই থাক তিনদিন পর ধরে নিবেন ফার্টাইল উইন্ডো শেষ। কিছু নিয়ম মেনে তাপমাত্রা মাপতে হবে। যখন তখন মাপলে হবে না। কখন মাপবেন? ঘুম থেকে উঠার পরে, কোনকিছু করার আগে বিছানায় থাকা অবস্থায় তাপমাত্রা মাপবেন। প্রতিদিন একই সময়ে মাপার চেষ্টা করবেন অর্থাৎ, নিয়মিত একই সময়ে ঘুম থেকে উঠার চেষ্টা করবেন।
বিছানার কাছেই থার্মোমিটার রেখে দিবেন। আবার আমরা অনেকেই বগলের নিচে তাপমাত্রা মাপি, এখানে সেটা করলে হবে না। মুখের তাপমাত্রা মাপতে হবে। থার্মোমিটার জিহ্বার নিচে রেখে মুখ বদ্ধ করবেন। জ্বর মাপার সাধারণ থার্মোমিটার দিয়ে মাপলে এত সূক্ষ্ম তাপমাত্রা বুঝা যাবে না। ডিজিটাল থার্মোমিটার ব্যবহার করবেন। বিভিন্ন ফার্মেসিতে অল্প খরচেই এটা কিনতে পাওয়া যায়। এই পদ্ধতিতে ফার্টাইল উইন্ডো কখন শুরু হয় বোঝা যায় না, তবে কখন শেষ হচ্ছে সেটা বুঝা যায়। তাহলে এটা কিভাবে কাজে লাগাবেন? একটু আগেই যে সাদা স্রাবের পদ্ধতি বুঝিয়েছিলাম, সেটা ব্যবহার করে সাদা স্রাব যাওয়া যেদিন থেকে শুরু হয়েছে সেদিন থেকে চেষ্টা শুরু করবেন আর এই পদ্ধতিতে তাপমাত্রা বাড়ার ৩য় দিন পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। তাহলে গর্ভধারণের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় সময় টুকু কাজে লাগানো হলো।
পরের পদ্ধতিতে যাওয়ার আগে একটু বুঝিয়ে বলা যাক, কেন মাসের একটা সময় সন্তান ধারণের সম্ভাবনা এতো বেড়ে যায়। একজন নারীর শরীরে দুইটা ওভেরি বা ডিম্বাশয় থাকে। প্রতি মাসে এখানে একটা করে ডিম্বাণু পরিপক্ক হয়। যখন ডিম্বাণু পরিপক্ক হয়ে যায় তখন সেটা খোলস ভেঙ্গে উপরের দিকে বের হয়ে ঢুকে ফ্যালোপিয়ান টিউব (Fallopian Tube) বা ডিম্বনালীতে। এই ঘটনাকেই আমরা ডিম ফুটে বেরিয়ে আসা বলি। যে ডিম্বাণুটা বের হয়ে আসলো এটা এখন সন্তান ধারণে সক্ষম। ফ্যালোপিয়ান টিউব বা ডিম্বনালীতে পুরুষের শুক্রাণু আগে থেকেই এসে বসে থাকে তাহলে সেটা ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয়। আর ডিম্বাণু শুক্রাণুর মিল হলেই কেবল তা গর্ভধারণে সক্ষম। যদি শুক্রাণু মিলিত না হয় তবে ডিম্বাণু একাএকা এসে জরায়ুতে এসে পৌছায়। তাহলে কয়েকদিন পরেই জরায়ু তার গায়ের মোটা প্রলেপ ঝেড়ে ফেলে সেখান থেকে রক্ত ক্ষরণ হয়।
এই ঘটনাকেই আমরা বাইরে থেকে মাসে মাসে মাসিক বা ঋতু স্রাব হিসাবে দেখে থাকি। এই সাধারণভাবে ঘটে। এর বাইরেও কিছু ব্যাপার আছে। তবে এখনকার আলোচনার জন্য সেটা বুঝার প্রয়োজন নেই। এখন খেয়াল করেন নারীর দেহে পুরুষের শুক্রাণু সাধারণত তিন দিন বাঁচে। কিছু ক্ষেত্রে সাত দিন পর্যন্ত বাঁচতে পারে। কিন্তু একটা পরিপক্ব ডিম্বাণু থাকে সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টা। তার মানে ডিম্বাণু খুব অল্প সময়ের জন্য থাকে। তাই ডিম্বাণু যে কয়েক ঘণ্টা আছে এই সময়টা আমাদেরকে ব্যবহ