পেপটিক আলসার
–গ্যাস্ট্রিক বা আলসার নামটি সাথে পরিচিত নয় এমন লোক খুঁজে বের করা হয়তো খুব কঠিন হবে। সাধারণত লোকজন গ্যাস্ট্রিক বা আলসার বলতে যা বুঝিয়ে থাকেন চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষা একে বলে পেপটিক আলসার। পেপটিক আলসার শুধুমাত্র পাকস্থলীতেই হয় না এটি পৌষ্টিক তন্ত্রের যেকোন অংশেও হতে পারে। সাধারণত পোষ্ট ঠিক তন্ত্রের যে যে অংশে ব্যাপ্তিক আলসার দেখা যায় সেগুলো হচ্ছে১) অন্য নালির নিচের প্রান্ত,২) পাকস্থলী, ৩) ডিউটি নামের বা ক্ষুদ্রান্তের প্রথম অংশ এবং ৪) পৌষ্টিকতন্ত্রের অপারেশনের পর যে অংশ জোড়া লাগানো হয় সেই অংশে।পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় উন্নয়নশীল দেশ তথা বাংলাদেশে এই রোগীর সংখ্যা খুবই বেশি ধনীদের চেয়ে গরিব লোকদের মধ্য এই রোগটি বেশি পরিলক্ষিত হয়। তবে নারী পুরুষ প্রায় সমানভাবে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
সম্মানিত ভিজিটর বন্ধুরাগ্যাস্ট্রিক বা পেপটিক আলসারের নাম আমরা অনেকেই শুনেছি কিন্তু এই সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা অনেকেরই নেই। যারা গ্যাস্ট্রিক বা পেপটিক আলসার সম্পর্কে জানতে চান তাদের জন্য আজকের আর্টিকেলে তুলে ধরা হবে। গ্যাস্ট্রিক বা পেপটিক আলসারের লক্ষণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা। আজকের আর্টিকেলে এই সম্পর্কে জানতে হলে অবশ্যই শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকতে হবে এবং আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
গ্যাস্ট্রিক বা পেপটিক আলসার কি
গ্যাস্ট্রিক বা আলসার বহুল পরিচিত একটি রোগের নাম। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের খাবার দাবার থেকে গ্যাস্ট্রিক তৈরি হয় যা ধীরে ধীরে আলসারে পরিণত হয়।একটি বা গ্যাস্ট্রিক আলসার শুধুমাত্র পাকস্থলীতে হয়ে থাকে এরকম অনেকেই ধারণা করে থাকেন আসলে এটি ভুল ধারণা পেপটিক বা গ্যাস্ট্রিক আলসার পৌষ্টিকতন্ত্রের ও যে কোন অংশে দেখা দিতে পারে।
পিচ্চিক বা গ্যাস্ট্রিক আলসার নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই দেখা দিতে পারে। অনেকের ধারণা ঝাল ও মসলাযুক্ত খাবারের কারণে পেপটিক আলসার হয় ধারণাটি ভুল বরং ঝাল ও মসলাযুক্ত খাবার পেপটিক আলসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। সিঙ্গাপুরের সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা কম মসলাযুক্ত খাবার খায় এবং যারা বেশি মসলাযুক্ত খাবার খায় তাদের তুলনায় তিনগুণ বেশি প্র্যাকটিক আনসার এ আক্রান্ত হয়েছে।মসলাযুক্ত খাবারের কারণে পাকস্থলীর অম্লতা পরিবর্তিত হয় ফলে পাকস্থলীতে আলসার তৈরি কারক ব্যাকটেরিয়া হ্যালিক বাক্টর বাঁচতে পারে না।
গ্যাস্ট্রিক বা পেপটিক আলসারের কারণ
বিভিন্ন কারণে গ্যাস্ট্রিক বা পেপটিক আলসার হয়ে থাকে।অনেকের শুধুমাত্র খাবার দাবারকেই গ্যাস্ট্রিক বা পেপটিক আলসারের জন্য দায়ী করে থাকেন। আসলে এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। এটি ছাড়াও অন্যান্য অনেক কারণে এই রোগটি হতে পারে। চলুন দেখে নেই গ্যাস্ট্রিক বা পেপটিক আলসারের কারণ গুলো কি কি
বংশগত
কারো নিকটতম আত্মীয়-স্বজন যেমন মা, বাবা চাচা মামা খালা ফুফু যদি এই রোগে আক্রান্ত থাকেন। তবে তাদের পেপটিক আলসার হবার ঝুঁকি বেশি থাকে। যাদের রক্তের গ্রুপ ‘ও’ তাদের মধ্যে এই রোগে প্রবণতা বেশি।
রোগ জীবানু
হেলিকোবেক্টর পাইলোরি নামক একপ্রকার অনুজীব এই রোগের জন্য বহুলাংশে দায়ী
ওষুধ
যে সমস্ত ওষুধ সেবনে পেপটিক আলসার হতে পারে তন্মধ্যে ব্যথা নাশক ঔষধ বা ঘ ঝঅওউঝ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ধূমপান
যারা ধূমপান করে থাকে তাদের মধ্য গ্যাস্ট্রিক বা পেস্টিক আলসার হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। ধূমপান এই রোগের অন্যতম একটি কারণ।
এছাড়াও কারো যদি পৌষ্টিকতন্ত্র থেকে বেশি পরিমাণে এসিড এবং প্রোটিন পরিপাককারী এক ধরনের এনজাইম বা পেপসিন নামে পরিচিত তা নিশ্চিত হতে থাকে এবং জন্মগতভাবে পৌষ্টিকতন্ত্রের গঠনগত কাঠামো দুর্বল থাকে তাহলে পেপটিক আলসার হতে পারে।
তবে সাধারণত যে কথাটা প্রচলিত ভাজাপোড়া কিংবা ঝাল জাতীয় খাবার খেলে পেট্রিক আলসার হয় এর কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ চিকিৎসা বিজ্ঞানে মেলেনি। তবে যারা নিয়মিত আহার গ্রহণ করেন না কিংবা দীর্ঘ সময় উপোস থাকে তাদের পেট্রিক আনসার দেখা দিতে পারে।
গ্যাস্ট্রিক বা পেপটিক আলসারের লক্ষণসমূহ
বিভিন্ন লক্ষণ বা উপসর্গ গ্যাস্ট্রিক বা পেপটিক আলসার কে নির্দেশ করে। এসব লক্ষণ বা ওপর স্বর্গ দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় যে একজন ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত তাই তার জরুরী চিকিৎসা প্রয়োজন। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি তখনই ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন যখন সে তার শরীরে নিচে উল্লেখিত লক্ষণগুলো বা উপসর্গ গুলো দেখতে পারবেন-
পেটে ব্যথা
সাধারণত পেটের উপরে ভাগের মাঝখানে বক্ষপি ঞ্জরের ঠিক নিচে পেপটিক আলসারের ব্যথা অনুভব হয়। তবে কখনো কখনো ব্যথাটা পেছনের দিকেও যেতে পারে।
ক্ষুধা থাকলে ব্যথা
এজাতীয় রোগী ক্ষুধার্ত হলেই পেটে প্রচন্ড পরিমানে ব্যথা অনুভব করে এবং খাবার খেলে সাথে সাথে তার ব্যথা কমে যায়। এটি গ্যাস্ট্রিক বা পেপটিক আলসারের অন্যতম একটি লক্ষণ।
রাতে ব্যথা অনুভব করা
অনেক সময় রাতের বেলা পেটে ব্যথার কারণে রোগী ঘুম থেকে জেগে উঠে। কিছু খেলে ব্যথা কমে যায় এবং রোগী আবার ঘুমিয়ে পড়ে এতে করে। এটি তার গ্যাস্ট্রিক আলসারের আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দহতে পারে।
মাঝেমধ্যে ব্যথা
পেপটিক আলসারের ব্যথা সাধারণত সব সময় থাকে না একাধারে ব্যথাটা কয়েক সপ্তাহ চলতে থাকে। তারপর রোগী সম্পূর্ণরূপে ভালো হয়ে যায়। এই অবস্থা কয়েক মাস থাকে তারপর আবার কয়েক সপ্তাহ দূরে ঠিক আগের মত ব্যথা অনুভব হয়।
ব্যথা কমে
পেপটিক আলসার ব্যথা সাধারণত দুধ এন্টাসিড খাবার খেলে কিংবা বমি করলে অথবা ঢেকুর তুললে কমে যায়।
এছাড়াও পেপটিক আলসারের রোগীদের মধ্য বুক জ্বালা অরুচি, বমি বমি ভাব, ক্ষুধামন্দা কিংবা হঠাৎ করে রক্ত বমি অথবা পেটে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হতে পারে।
পেপটিক বা গ্যাস্ট্রিক আলসারের চিকিৎসা
গ্যাস্ট্রিক আলসারে আক্রান্ত হলে যথাসময়ে চিকিৎসা করানো উচিত। যদি কেউ অবহেলায় এই রোগটিকে দীর্ঘদিন ধরে ভোগ করে তাহলে ধীরে ধীরে তা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে থাকে। তাই অবশ্যই এই রোগ দেখা দেওয়া মাত্র রোগীর চিকিৎসা প্রয়োজন। ডাক্তাররা এই ধরনের রোগীকে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
শৃঙ্খলা
পেপটিক আলসারের আক্রান্ত রোগীদের অবশ্যই ধূমপান বন্ধ করতে হবে। ব্যথা নাশক ঔষধ অর্থাৎ এস্প্রিন জাতীয় ওষুধ সেবন থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকতে হবে এবং নিয়মিত খাবার গ্রহণ করতে হবে।
ওষুধ
পেপটিক আলসারের রোগীরা সাধারণত এন্টাসিড, রেনিটেডিন, ফেমুটেডিং, ওমিপ্রাজল, লেন্সোপ্রাজল জাতীয় ঔষধ সেবনে উপকৃত হন।
কারণভিত্তিক চিকিৎসা
জীবাণিজনি তো কারণে যদি এই রোগ হয়ে থাকে তবে বিভিন্ন ওষুধের সমন্বয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
যা ট্রিপল থেকে থেরাপি নামে পরিচিত।
অপারেশন
পেপটিক আলসারের ক্ষেত্রে অপারেশন সাধারণত জরুরি নয় তবে দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ সেবনের পরে যদি রোগী ভালো না হয় কিছু খেলে যদি বমি হয়ে যায় অর্থাৎ পোষ্ঠিক নালীর কোন অংশ যদি শুরু হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে অপারেশনের করিয়ে রোগী উপকৃত হতে পারেন।
সময় মত পেপটিক আলচারের চিকিৎসা না করলে রোগীর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে।
গ্যাস্ট্রিক বা পেপটিক আলসারের রোগীদের সচেতনতা
যথা সময়ে এই রোগের চিকিৎসা প্রয়োজন। কেউ যদি এই রোগে দীর্ঘদিন ভোগে কিন্তু এই রোগে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে তাহলে তার শারীরিক বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। যেমন-
*পাকস্থলী ফুটা হয়ে যেতে পারে।
*রক্ত বমি হতে পারে।
*কালো পায়খানা হতে পারে।
*রক্তশূন্যতা হতে পারে।
*ক্যান্সার হতে পারে।
*পোস্ঠিক নালীর পথ সরু হয়ে যেতে পারে এবং রোগীর বারবার বমি হতে পারে।
কাজেই যারা দীর্ঘমেয়াদি পেপটিক আলসারের ভুগছেন তাদের উচিত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। পেপটিক আলসারজনিত জটিলতা আগে থেকেই সনাক্ত করা এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া। প্রয়োজনীয় অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা ধরে না রেখে সুস্থ সুন্দর সঠিক জীবন যাপন করা উচিত।
সচরাচর জিজ্ঞাসা
পেপটিক বা গ্যাস্ট্রিক আলসার কি কোন ছোঁয়াচে বা সংক্রমিত রোগ?
উত্তর: পেপটিক আলসার কোন ছোঁয়াচে বা সংক্রমিত রোগ নয়। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকলে অন্য কারো এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
পেপটিক আলসার কি পাকস্থলীর কোনো রোগ?
উত্তর:পেপটিক আলসার যে শুধুমাত্র পাকস্থলীতেই হয়ে থাকে তা কিন্তু নয় বরং এটি পোস্ঠিক তন্ত্রের যে কোন অংশেই হতে পারে।
পেপটিক আলসার কি ক্যান্সারের কারণ হতে পারে?
উত্তর: যদি যথাসময়ে সঠিক চিকিৎসা না করা হয় তাহলে পেপটিক আলসার ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
শেষ কথা
সম্মানিত পাঠক পাঠিকা বন্ধুরা আমাদের আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি গ্যাস্ট্রিক বা পেপটিক আলসারের লক্ষণ কারণ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে। আপনারা এতক্ষণ আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ে নিশ্চয়ই এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আমাদের ওয়েবসাইটে আরও বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল পেতে অবশ্যই নিয়মিত ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন। কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। আর অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন এবং আমাদের সাথে থাকবেন। আজকের মতো বিদায় নিচ্ছি। সকলে ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
পোস্ট ট্যাগ-
পেপটিক আলসার ট্রিটমেন্ট,পেপটিক আলসার এর লক্ষণ,পেপটিক আলসার রোগীর খাবার,পেপটিক আলসারের হোমিও চিকিৎসা,পেপটিক আলসারের ঘরোয়া চিকিৎসা,আলসার কত দিনে ভালো হয়,আলসারের ঔষধ কতদিন খেতে হয়,গ্যাস্ট্রিক আলসার।