বহুযুগ ধরে প্রাচীন দিল্লির সাক্কে ওয়ালি গলিতেই ভিস্তিওয়ালাদের বাস।

 আজকাল ট্রেনে বাসে রাস্তায় রেস্তোরাঁয় সর্বত্রই জল তেষ্টা পেলে আমাদের হাতে উঠে আসে ঠান্ডা বা নর্মাল সিল করা জলের বোতল।

কিন্তু এই ফ্রিজ তো হালে এলো!

প্রশ্ন উঠতেই পারে, তখন কি মানুষ ঠান্ডা জল খেতেন না?

আজ্ঞে খেতেন, আলবাত খেতেন।

তখন ফ্রিজ না থাকলেও ছিল ‘ভিস্তি’।

‘ভিস্তি হল এক ধরনের বস্তার মত দেখতে ব্যাগ।

ছাগলের চামড়া দিয়ে তৈরি এই বিশেষ থলেকে ‘মশক’ও বলে।

এতে রাখলে ফ্রিজের মতোই ঠান্ডা থাকত জল।

আর স্বয়ং জলদাতা হয়ে এই ভিস্তির জল যারা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতেন তাদের বলা হত ভিস্তি ওয়ালা।


এই ভিস্তিওয়ালাদের সঙ্গে রয়েছে ইতিহাসের যোগ।

কথিত আছে, মুঘল নবাব হূমায়ুন একবার জলে ডুবে যাচ্ছিলেন।

তখন নবাবকে বাঁচিয়েছিলেন এক ভিস্তিওয়ালা।

এমনকি এই ভিস্তির উপর ভরকরেই সাঁতরে উঠেছিলেন হূমায়ুন।

কৃতজ্ঞতা স্বরূপ সেই ভিস্তিওয়ালাকে একদিনের জন্য তার আসনেও বসিয়েছিলেন তিনি।

অভিবক্ত ভারতবর্ষের ঢাকায় এবং কলকাতায় জল বিলোনোর কাজ করতেন এই ভিস্তিওয়ালারাই।


কিন্তু স্মার্টফোন সর্বস্ব এই ওভারস্মার্ট যুগে আজকের প্রজন্ম হয়ত জানেইনা ভিস্তিওয়ালাদের কথা।

পার্সি শব্দ ‘বেহেস্ত’ শব্দের অপভ্রংশ হয়ে এসেছে ভিস্তি, এর অর্থ হল স্বর্গ। পৃথিবীর পশ্চিম ও মধ্য প্রান্তে স্বর্গের বেশীরভাগ ছবিতেই মিলেছে নদী ও বাগানের ছবি।

কথিত আছে সেই স্বর্গের নদী থেকে জল এনেই ভিস্তিরা তা বিলিয়ে দিতেন মানুষকে, তাই তাদের স্বর্গের-দূতও বলা হত।


তিলোত্তমাতেও এককালে এদের একচেটিয়া আনাগোনা ছিল।

ভোরবেলা দোর খুলে রাস্তায় বেরোলেই দেখা মিলত ভিস্তিওয়ালাদের।

কাঁধে জল ভরতি চামড়ার ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে পড়তেন মুসলিম সম্প্রদায়ের এই মানুষগুলো।

দিল্লিতেও একসময় ছিল ভিস্তির চল।

তবে এখনও এই প্রাচীন পদ্ধতি বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম জামা মসজিদের বাইরে মুশতাকিম চায়ের দোকান।

দোকানে গেলেই দেখা যাবে, ঝোলানো রয়েছে ছাগলের চামড়া দিয়ে তৈরি লম্বা লম্বা ভিস্তি।

বহুযুগ ধরে প্রাচীন দিল্লির সাক্কে ওয়ালি গলিতেই ভিস্তিওয়ালাদের বাস।


(সংগৃহীত)

বহুযুগ ধরে প্রাচীন দিল্লির সাক্কে ওয়ালি গলিতেই ভিস্তিওয়ালাদের বাস।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post