সুড়ঙ্গ, suranga movie download

 “লোভ আপনার বাড়িতে খুব নিঃশব্দে প্রবেশ করে। লোভী ব্যক্তি সবসময় অভাবী থাকে। আপনি যদি নিজের লোভের দাস হয়ে যান তবে একদিন এটি আপনাকে একটি অজানা কবরে টেনে তুলবে।”


🎬𝗠𝗼𝘃𝗶𝗲: সুড়ঙ্গ

📽️𝗚𝗲𝗻𝗿𝗲: ক্রাইম, থ্রিলার

⏰𝗥𝘂𝗻𝘁𝗶𝗺𝗲: ২ ঘন্টা ৩৩ মিনিট

🏴𝗖𝗼𝘂𝗻𝘁𝗿𝘆: বাংলাদেশ 

🏳️𝗟𝗮𝗻𝗴𝘂𝗮𝗴𝗲: বাংলা 

📅𝗥𝗲𝗹𝗲𝗮𝘀𝗲 𝗗𝗮𝘁𝗲: ২৯ জুন, ২০২৩

🟡𝗜𝗺𝗱𝗯 𝗥𝗮𝘁𝗶𝗻𝗴: ৬.১/১০

🟢𝗣𝗲𝗿𝘀𝗼𝗻𝗮𝗹 𝗥𝗮𝘁𝗶𝗻𝗴: ৭.৫/১০


#𝗟𝗶𝗴𝗵𝘁_𝗦𝗽𝗼𝗶𝗹𝗲𝗿

সুড়ঙ্গ, suranga movie download




গতানুগতিক একঘেঁয়ে এবং বিরক্তিকর অ্যাকাডেমিক প্রেশারে পরিপোষক ক্যাম্পাস লাইফে ইদানীং অনেকটাই হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। একদিন ভাবলাম, জীবনে তো শত শত মুভি দেখেছি কিন্তু থিয়েটারে বসে কখনো মুভি দেখা হয়ে উঠেনি৷ তাই মাইন্ড ফ্রেশিং এবং নতুন অভিজ্ঞতার জন্য হুট করেই সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে অনলাইনে চট্টগ্রামের সিলভার স্ক্রিনে এ বছরের সবচাইতে আলোচিত এবং প্রশংসিত ফিল্ম 'সুড়ঙ্গ' এর টিকেট কেটে ফেললাম গতকাল রাত ৮ টার শো এর এবং দেখেও এলাম যথাসময়ে। মুভিটার ভালোমন্দ নিয়ে বিস্তারিত কথাবার্তা বলার আগে এর সম্পর্কে একটা কথা উল্লেখ না করলেই নয়, 'একদম পয়সা উসুল সিনেমা, একদম হতাশ করেনি সবমিলিয়ে দারুণ উপভোগ করেছি'। 


#𝗣𝗹𝗼𝘁_and_𝗦𝘂𝗺𝗺𝗮𝗿𝘆:

বাংলাদেশের কোনো এক প্রত্যন্ত গ্রামের সহজ-সরল বাসিন্দা মাসুদ, যিনি পেশায় একজন ইলেকট্রিশিয়ান৷ একদিন গ্রামে ময়না নামে একটা মেয়ে আসে এবং ঘটনাক্রমে মাসুদের সাথে তার দেখা, পরিচয়, সম্পর্ক এবং সবশেষে বিয়ে হয়৷ কিন্তু দুঃখের বিষয়, তাদের সুখের সংসার বেশিদিন টিকেনি৷ একটার পর একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা এসে তাদের দুইজনের জীবনেই বড়সড় প্রভাব ফেলতে থাকে এবং পরিস্থিতির শিকার হয়ে দুইজনের জীবনেই ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন আসতে থাকে৷ কি ছিলো সেসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা, লোভ এবং নির্বুদ্ধিতার পরিণাম যে কতোটা ভয়াবহ হতে পারে তা জানতে হলে দেখে নিন এই অসাধারণ মুভিটি। 


#𝗣𝗲𝗿𝘀𝗼𝗻𝗮𝗹_𝗢𝗽𝗶𝗻𝗶𝗼𝗻:

লোভ-লালসা, ভালোবাসা, বিশ্বাসঘাতকতা, স্বার্থপরতা, বিদ্বেষ, অপরাধপ্রবণতা, অসহায়ত্ব, পরিণাম, প্রতিশোধপরায়ণতা ইত্যাদি সবমিলিয়ে গল্পের মধ্য দিয়ে বর্তমান সমাজের এক করুণ বাস্তবতার চিত্র উঠে এসেছে৷ তবে গল্পের কিছু কিছু জায়গায় ডিটেইলিং এর অভাব ছিলো এবং টার্নিং পয়েন্টগুলোতে প্রোপার ইমোশনাল টাচ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। গল্পের অনেক জায়গায় বেশকিছু টার্নিং পয়েন্ট এবং লাস্টের দিকে গিয়ে টুইস্ট ছিলো তবে সেগুলোর উপস্থাপনা আরো কিছুটা নাটকীয় করা যেতো৷ কোনোপ্রকার গাইন্ডেন্স বা ওয়ার্নিং না দিয়েই গল্পে প্রচুর ১৮+ দৃশ্য, সামান্য ভায়োলেন্স এবং বেশ গালাগালিপূর্ণ ডায়ালগের উপস্থিতি ছিলো৷ 

 আর ফার্স্ট হাফে স্ক্রিনপ্লে খুব ফাস্ট ছিলো, সরাসরি গল্পের মধ্যে ঢুকে যায় কোনো অতিরঞ্জিত বা অপ্রয়োজনীয় দৃশ্য না রেখেই এবং সেকেন্ড হাফের শুরুতে কিছুটা স্লো হলেও এরপর থেকে এতোটাই ফাস্ট এবনং এংগেজিং ছিলো যে স্ক্রিন থেকে এক মুহূর্তের জন্যও চোখ সরাতে পারিনি। 


লিড রোল ইলেকট্রিশিয়ান মাসুদ চরিত্রে বড় পর্দার ডেব্যুট অভিনেতা আফরান নিশোর অভিনয়, বডি ল্যাংগুয়েজ, এক্সপ্রেশন, ডায়ালগ ডেলিভারি ইত্যাদি সবকিছু ছিলো চরিত্র অনুযায়ী একদম পারফেক্ট, কোনো ওভারএক্টিং বা ঘাটতি ছিলো না বরং পুরোটা সময় তিনি চরিত্রটাকে নিজের মধ্যে ধারণ করে যথেষ্ট ইম্পেক্টফুল এবং প্রোপার মোমেন্টাম বজায় রেখেছেন বেশ দক্ষতার সহিত, এতোদিন ধরে তাকে নাটক/টেলিফিল্মে যে অবতারে দেখে আমরা অভ্যস্ত তার থেকে অনেকটাই বেরিয়ে এসেছেন তিনি এবং বড় পর্দায় পদার্পণের শুরুতেই উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছেন তিনি৷ মাসুদের সহধর্মিণী ময়না চরিত্রে তমা মির্জার অভিনয়ও খুব ভালো ছিলো৷ মাসুদের বন্ধু জমিজমা ব্যবসার দালাল জহির চরিত্রে মোস্তফা মনোয়ারও খুব ভালো অভিনয় করেছেন৷ আর গোয়েন্দা পুলিশ অফিসারের পার্শ্ব চরিত্র আপেল খান এ শহীদুজ্জামান সেলিম এর কথা উল্লেখ না করলেই নয়, সেকেন্ড হাফে যখন গল্প কিছুটা স্লো হয়ে গিয়েছিলো ঠিক তখনই এই সাইড অথচ ইম্পেক্টফুল চরিত্রটা এসে গল্পের প্রাণ ফিরিয়ে আনে। তার দুর্দান্ত অভিনয়ের সঙ্গে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার বিভিন্ন সংলাপ শুনে হলভর্তি দর্শক হাসিতে মেতে উঠেছে, পার্শ্ব চরিত্রে থেকেও গল্পে এতোটা প্রভাব বিস্তারের ঘটনা যেনো সিনেমার ইতিহাসে নজিরবিহীন। 


অসাধারণ সিনেমাটোগ্রাফির কাজ দেখে আমি পুরোপুরি মুগ্ধ৷ এই মুভিতে 'ALEX MINI LF' মডেলের Large Format Small Camera ব্যবহৃত হয় যা বাংলাদেশে প্রথম৷ ক্যামেরার বিভিন্ন শট এবং পজিশন, লাইটিং, অ্যাঙ্গেল, কম্পোজিশন ইত্যাদির পারফেক্ট কম্বিনেশন সিনেমার প্রতিটা দৃশ্যকে অত্যন্ত রিয়েলিস্টিক এবং নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করেছে।

 

আর্ট ডিরেকশন এবং সেট ডিজাইনের কাজও ছিলো বেশ নিখুঁত এবং যত্ন সহকারে নির্মিত৷ সুড়ঙ্গ, রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, জেলখানা ইত্যাদি অনেককিছু আর্ট ডিরেকশনের সাথে যুক্ত সদস্যরা দিনের পর দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে বেশ যত্ন সহকারে তৈরি করেছেন যার কারনে সিনেমার প্রত্যেকটা দৃশ্যই বেশ রিয়েলিস্টিক একটা ভাইভ দিবে। তবে মাসুদের মালেশিয়া জীবনের দৃশ্যগুলোর ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস খুব দুর্বল ছিলো৷ ফিল্মে ডার্ক ইয়েলো শেডের কালার গ্রেডিং এবং দুর্দান্ত এডিটিংয়ের কাজ দর্শককে সাইকোলজিক্যালি এবং ভিজ্যুয়ালি কানেক্ট করতে সক্ষম হয়েছিলো পুরোপুরি। 


মুভির আরো একটি স্ট্রং পয়েন্ট ছিলো শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটা দৃশ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সব ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের ব্যবহার, যা ইমোশনালি দর্শককে আঁকড়ে ধরে থাকবে পুরোটস সময়ে৷ আর মুভির গানগুলোর প্লেসমেন্ট এবং লিরিক্স সবকিছুই ছিলো টপ নচ, যার মধ্যে 'যে গা ছুঁয়ে বলো', 'আমার কেমন কেমন লাগে' এবং 'ও টাকা তুই আমার কলিজার জান'(এটার অ্যারেঞ্জমেন্ট & প্লটের সাথে কানেকশন ঠিকঠাক থাকলেও লিরিক্স কিছুটা অসামঞ্জস্যপূর্ণ ছিলো) উল্লেখযোগ্য। 


আর্ট ডিরেক্টর শহীদুল ইসলামের অক্লান্ত পরিশ্রম, সিনেমাটোগ্রাফার সুমন সরকারের প্রতিভা, নাজিমউদ্দৌলার চমৎকার লেখনী এবং পরিচালক রায়হান রাফির ক্রমশ উন্নতির পথে ধাবমান মেকিং স্টাইল এবং ডিরেকশনের প্রশংসা না করলেই নয়৷ রায়হান রাফির কাজগুলো প্রতিনিয়ত একটা আরেকটাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে, এবার দেখার পালা 'সুড়ঙ্গ' এর পরে কি আসে। এসব কলাকুশলীদের হাত ধরেই এগিয়ে যাক বাংলা ইন্ডাস্ট্রি, ফিরে আসুক আমাদের হারানো গৌরব এই প্রত্যাশা করি৷ 


#𝗟𝗮𝘀𝘁_𝗼𝗳_𝗮𝗹𝗹, হলে বসে মুভি উপভোগ করার দারুণ এক অভিজ্ঞতা হলো গতকাল, নাইট শো অলমোস্ট ফুল ছিলো৷ কিছু কিছু জায়গায় ত্রুটি এবং ঘাটতি থাকলেও পজিটিভ দিকগুলোর পাল্লা ভারী ছিলো, সেগুলো সবটা পুষিয়ে দিয়েছে তাই সবমিলিয়ে খুব ভালো লেগেছে আমার কাছে এবং পুরোটা সময় খুব উপভোগ করেছি৷ 

'সুড়ঙ্গ' সিনেমাটাও রিলিজের পর থেকে দারুণ ব্যবসা করছে এবং দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রাজত্ব করতে যাচ্ছে৷ এসব মানসম্মত সিনেমার মাধ্যমে বাংলা ইন্ডাস্ট্রি পুনরায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে এবং নন্দিত অভিনেতা আফরান নিশো বড় পর্দায় প্রথম কাজের দ্বারাই এভাবে বাজিমাত করার পর নিজেকে আরো বৃহৎ পরিসরে তুলে ধরবেন শীঘ্রই। আপনাদেরকে বলছি, হাতে সময় থাকলে থিয়েটারে গিয়ে দেখে আসুন মুভিটা, বাংলা ইন্ডাস্ট্রির পাশে দাঁড়ান, বাংলা মুভির উন্নতি এবং অগ্রযাত্রার সঙ্গী হোন৷ 😊

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post